Posted On : Feb 06 , 2025
Posted By : Team CureSureMedico
ক্যান্সার একটি জটিল রোগ যা ধূমপান, অতিবেগুনী রশ্মির সংস্পর্শ এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মতো বেশ কয়েকটি সুপরিচিত কারণে হতে পারে। তবে, কিছু কারণ আরও বেশি অপ্রত্যাশিত এবং সাধারণ মানুষের কাছে কম পরিচিত। জানুন এই অজানা কারণগুলো যা ক্যান্সার হওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
1. অতিরিক্ত গরম পানীয়
৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় চা বা কফির মতো গরম পানীয় পান করা খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত তাপ শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বাড়ায়।
2. কিছু প্রসাধনী পণ্য
কিছু কসমেটিকসের মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থ, যেমন প্যারাবেন এবং ফথ্যালেটস, হরমোনগত ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এই উপাদানগুলো স্তন ক্যান্সারের মতো হরমোন-নির্ভর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
3. অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার
যদিও গবেষকরা এখনো একমত নন, তবুও দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয় তরঙ্গে (Electromagnetic waves) সংস্পর্শে থাকা মস্তিষ্কের টিউমারের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। গবেষকরা ইয়ারফোন ব্যবহার করা এবং দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলার অভ্যাস কমানোর পরামর্শ দেন।
4. ঘরের বায়ু দূষণ
আমরা সাধারণত বাইরের বায়ু দূষণের কথা ভাবি, কিন্তু ঘরের বাতাসও ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু ক্লিনিং প্রোডাক্ট, সুগন্ধি মোমবাতি এবং এয়ার ফ্রেশনারের মধ্যে থাকা ভোলাটাইল অর্গানিক কম্পাউন্ডস (VOC) ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
5. শরীরচর্চার অভাব
পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ না থাকা একটি বড় ঝুঁকির কারণ। এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ সৃষ্টি করে, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা কোলন এবং স্তন ক্যান্সারের মতো ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
6. কিছু হরমোন থেরাপি
মেনোপজ পরবর্তী উপসর্গ কমাতে ব্যবহৃত হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কিছু হরমোন-নির্ভর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যারা এই ধরনের থেরাপি নিচ্ছেন, তাদের নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা করানো উচিত।
7. দীর্ঘ সময় ধরে কৃত্রিম আলোতে থাকা
রাতের শিফটে কাজ করা এবং স্ক্রিনের নীল আলোতে বেশি সময় ব্যয় করা মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। এই হরমোনের ঘাটতি স্তন ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
8. কিছু অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার
অনেক প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ও কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় উপাদান থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত।
9. দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ
চাপ ও উদ্বেগ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে, প্রদাহ বৃদ্ধি করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ধ্যান, ব্যায়াম এবং রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করে মানসিক চাপ কমানো একটি কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হতে পারে।
10. কিছু ধরনের পোশাক
কিছু পোশাক, বিশেষ করে যেগুলো ফ্লেম রিটার্ডেন্ট বা রাসায়নিক রঞ্জক দিয়ে তৈরি, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ধারণ করতে পারে। নিরাপদ বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক তন্তুযুক্ত (cotton, linen) কাপড় ব্যবহার করা উত্তম।
11. চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত কিছু ইমপ্ল্যান্ট
কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত ইমপ্ল্যান্ট, যেমন টেক্সচার্ড ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট, বিরল কিছু ক্যান্সারের (Lymphoma) সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাই এই ধরনের চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়।
12. কলের পানিতে বিষাক্ত উপাদান
কিছু অঞ্চলের কলের পানিতে নাইট্রেট, সিসা এবং কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থাকতে পারে, যা পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। পানি পরিশোধনকারী ফিল্টার ব্যবহার করে এই ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
13. গ্রিল বা ধোঁয়ায় রান্না করা মাংস
উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা মাংসে Polycyclic Aromatic Hydrocarbons (PAHs) এবং Heterocyclic Amines (HCAs) উৎপন্ন হয়, যা ক্যান্সারের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ। সেদ্ধ বা ওভেনে রান্নার মতো স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নেওয়া উত্তম।
14. কিছু ভাইরাল সংক্রমণ
মানব প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) এবং এপস্টেইন-বার ভাইরাসের মতো কিছু ভাইরাস ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, যেমন জরায়ুমুখ ক্যান্সার এবং নাসোফ্যারিনজিয়াল ক্যান্সার। টিকাদান ও প্রাথমিক স্ক্রিনিং ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
15. পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, যা কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য ঘুমের স্বাস্থ্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
কিছু ক্যান্সারের কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে জীবনধারার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো সম্ভব। সম্ভাব্য ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান থেকে দূরে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাই এই প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধের কার্যকর উপায় হতে পারে।