background

তীব্র করোনারি সিনড্রোম (ACS)

post image

তীব্র করোনারি সিনড্রোম একটি শারীরিক অবস্থা যা বিভিন্ন করোনারি ধমনী রোগের সমষ্টি। এই অবস্থাগুলির কারণে হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহ কমে যায় বা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ACS একটি জীবন-হানিকর অবস্থা এবং অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।

ACS সাধারণত তিনটি অবস্থার অন্তর্গত:

  1. অস্থির এনজাইনা (Unstable Angina)
  2. নন-ST-এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (NSTEMI)
  3. ST-এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (STEMI)

ACS-এর প্রতিটি ধরণের তীব্রতা এবং হৃদযন্ত্রে সৃষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ভিন্ন। উপসর্গগুলোর প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা জটিলতা হ্রাস এবং ফলাফল উন্নত করতে পারে।

তীব্র করোনারি সিনড্রোমের কারণ কী?

সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল করোনারি ধমনীগুলির হঠাৎ অবরোধ, যা অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদযন্ত্রে সরবরাহ করে।

  • এথেরোস্ক্লেরোসিস (Atherosclerosis): এটি একটি অবস্থা যেখানে ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য পদার্থের জমা ধমনীগুলিকে সংকুচিত করে।
  • প্লাক ফেটে যাওয়া: প্লাক ফেটে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে যা ধমনীর পথ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়।
  • দুর্লভ কারণসমূহ:
    • করোনারি ধমনীর এম্বোলিজম
    • স্বতঃস্ফূর্ত করোনারি ধমনী বিচ্ছেদ (SCAD)
    • করোনারি ধমনী স্প্যাজম

তীব্র করোনারি সিনড্রোমের ধরণ

  1. অস্থির এনজাইনা (Unstable Angina):
    হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিত বুকে ব্যথা বা চাপ, যা সাধারণত বিশ্রামের সময়ও ঘটে।

  2. NSTEMI:
    একটি হৃদরোগ যার ECG তে বড় পরিবর্তন দেখা যায় না কিন্তু বিশেষ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়।

  3. STEMI:
    একটি গুরুতর হৃদরোগ যা দীর্ঘস্থায়ী এবং সম্পূর্ণ রক্ত সরবরাহ বন্ধের কারণে ঘটে।

কারা ঝুঁকিতে?

  1. বয়স: পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছরের বেশি, নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজ-পরবর্তী সময়।
  2. জীবনযাপন: ধূমপান, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, চর্বি এবং কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস।
  3. পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য অবস্থা: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা।

উপসর্গসমূহ

  1. বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি।
  2. শ্বাসকষ্ট।
  3. ক্লান্তি এবং দুর্বলতা।
  4. মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া।
  5. অতিরিক্ত ঘাম।

নারীদের জন্য বিশেষ উপসর্গ

নারীরা সাধারণত বুক ব্যথা অনুভব না করে, বরং বমি ভাব, পেটব্যথা, বা গলা-জবা ব্যথা অনুভব করেন।

তীব্র করোনারি সিনড্রোমের নির্ণয় ও চিকিৎসা

  1. ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম (EKG): হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ।
  2. রক্ত পরীক্ষা: ট্রপোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
  3. ইমেজিং পরীক্ষা:
    • ইকোকার্ডিওগ্রাম
    • সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি
    • কার্ডিয়াক এমআরআই

চিকিৎসা পদ্ধতি

  1. ওষুধ:

    • অ্যান্টিকোগুল্যান্টস (রক্ত পাতলা করার ওষুধ)
    • নাইট্রোগ্লিসারিন
    • বিটা-ব্লকার
    • স্ট্যাটিন
  2. সার্জারি:

    • অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং স্টেন্ট স্থাপন।
    • করোনারি বাইপাস সার্জারি।

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

  1. ধূমপান বন্ধ করুন।
  2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ করুন।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  4. উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করুন।
  5. স্ট্রেস কমান।

উপসংহার

তীব্র করোনারি সিনড্রোম একটি গুরুতর হৃদরোগের স্পেকট্রাম। দ্রুত চিকিৎসা এবং জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হৃদরোগের লক্ষণ দেখা দিলে, দেরি না করে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিন।

Whatsapp Us